প্রশ্ন ফাঁস চলছেই, বহিষ্কার হচ্ছে আটক ও হচ্ছে,কিন্তু হচ্ছেনা সমাধান

ফেনী প্রতিনিধি:>>>
প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব হয়নি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের পর গতকাল শনিবার ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে।
গতকাল এসএসসির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘বিডি ও বিশ্বপরিচয় (২০০ টাকা)’ নামে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে এই বহু নির্বাচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। আর মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার আগের ১০টি বিষয়ের বহু নির্বাচনী অভীক্ষার প্রশ্নপত্র একইভাবে ফাঁস হয়।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও জামালপুরের বকশীগঞ্জে দুই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও পাবনার বেড়া উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাত শিক্ষককে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মাদরাসা সুপারকে জেল ও পাঁচ ভুয়া পরীক্ষার্থীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্থানীয় প্রতিনিধিরা বিস্তারিত জানিয়েছেন।
উল্লাপাড়ায় মাদরাসা সুপারের জেল : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে মাদরাসা সুপারসহ পাঁচ ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আটক করে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল তাদের আটকের পর বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান এই আদেশ দেন। বিচারক মাদরাসা সুপার আতাউর রহমানকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ ভুয়া পরীক্ষার্থীর প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন।
হাতীবান্ধায় শিক্ষক আটক : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আওলাদ হোসেন নামে এক শিক্ষককে আটকের পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা একটি নোটপ্যাড ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গতকাল অনুষ্ঠিত পরীক্ষার (বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ) ২৫টি প্রশ্নসহ উত্তর লেখা ছিল ওই নোটপ্যাডে। এ ছাড়া তাঁর মোবাইলে এর আগে অনুষ্ঠিত একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়।
বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে ঘোরাফেরার সময় উপস্থিত ইউএনওর সন্দেহে হলে আওলাদকে আটক করে তল্লাশি করা হয়। তিনি ওই বিদ্যালয়ে ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট পদে কর্মরত থাকলেও মূলত শিক্ষকতা করতেন বলে জানা গেছে।
বকশীগঞ্জে প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষক আটক : প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে জামালপুরের বকশীগঞ্জে এনএম উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে গতকাল প্রশ্নপত্রসহ সাইফুর রহমান সবুজ (২৮) নামে এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ করা হয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রসহ অন্য এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগে স্থানীয় এক কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সাইফুর রহমান সবুজ কেন্দ্রে ঢুকে কিছু ছাত্রকে নকল সরবরাহ করছিলেন। এ সময় পরিদর্শকরা তাঁকে ধরে পুলিশে দেন এবং তাঁর মোবাইল ফোন জব্দ করেন। একই সময়ে অন্য একটি কক্ষে স্থানীয় নজরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাহার আলী সাজুর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তাঁর মোবাইলেও প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। ওই সময় শিক্ষক সাজু পালিয়ে যান।
ভূঞাপুরে দায়িত্বে অবহেলায় চার শিক্ষককে অব্যাহতি : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে চার শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষায় ওই শিক্ষকদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ আহম্মেদ জানান, গতকাল ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে গতকাল চারজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁরা অনৈতিকভাবে পরীক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ায় চলমান সব পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দাখিল পরীক্ষায় উত্তর বলে দেওয়ায় তিন শিক্ষক বহিষ্কার : পাবনার বেড়া উপজেলায় গতকাল একটি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেওয়ার অভিযোগে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা তিন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়। বেড়া পৌর এলাকার বেড়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বহিষ্কৃতরা হলেন উপজেলার পাঁচুরিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, নাকালিয়া বিআই দাখিল মাদরাসার সহকারী মৌলভী মোস্তাক হোসেন ও মানিকনগর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা।
খুলনায় গ্রেপ্তার ৯ : এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে খুলনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল সকালে র্যাব-৬-এর সদস্যরা নগরের খালিশপুর, দৌলতপুর, চিত্রালীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা হলো খালিশপুরের কাশিপুর এলাকার খায়রুল, নাইমুর রহমান, সাব্বির, সাব্বির হোসেন, সাকিব হোসেন, মোনায়েম সাহরিয়া রাফি ও চয়ন রায়; যশোরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ইব্রাহিম আল নাঈম ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সাজিদ। তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।