তিন পদ একাই সামলাচ্ছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক!

GS News 24GS News 24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:২৬ এএম, ০৭ নভেম্বর ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবদেক:>>>>

এক বছরের বেশি সময় ধরে নেই সচিব। দুই মাস ধরে নেই চেয়ারম্যান। নিজের দায়িত্বের বাইরে এ দুটি পদের দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে। এই অবস্থায় চলছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম। এতে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনামূলক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।

তিন পদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান। তিনি জানান, অনেকটা অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে আগামীতে এই বোর্ডের শিক্ষার মান কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়,২০০৬ সালে স্থাপিত এ বোর্ডের সচিবের পদটি শূন্য হয় ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর। ওই সময়ে শিক্ষা বোর্ডের সচিব আমিনুল হক সরকার পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হওয়ায় পাঁচবিবি সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় প্রফেসর আহমেদ হোসেনকে মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করে বদলি করা হয়। ফলে গত দু’মাস ধরে শূন্য হয়ে আছে বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ।

এদিকে, চেয়ারম্যান ও সচিবের পদ দুটি শূন্য থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব পদের দায়িত্বও পালন করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান। তিন পদের দায়িত্বে থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ, শিক্ষাবোর্ডের আর্থিক ও মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক কাজ করতে হচ্ছে তাকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে জেএসসি পরীক্ষা চলায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার মূল দায়িত্ব অর্থাৎ পরীক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।  এ কারণে  শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বাড়াতে অন্যান্য কার্যক্রমে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও শিক্ষা বোর্ডের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সচিব পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি কাউকে। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও আর্থিক লেনদেনে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা। শুধু তাই নয়,একজন সচিবের আওতায় থাকে বোর্ডের মালামালের রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব। কিন্তু এ বোর্ডে সচিবের পদটি শূন্য থাকায় সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে গত আগস্ট মাসের বন্যায় শিক্ষা বোর্ডের বড় বন্দরে থাকা গুদাম ঘরে রাখা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার খাতা ও ওএমআর শিট নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো পরবর্তী সময়ে নতুন করে তৈরি করতে চার কোটি ১৬ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হয় শিক্ষা বোর্ডকে। শুধু তাই নয়,তদারকির অভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠন করা হয়নি কোনও তদন্ত কমিটি।

বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ দুই পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দাফতরিক কাজ করতে গিয়ে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা পদ দু’টি পূরণ করা খুবই জরুরি। যদিও বর্তমানে তেমন সমস্যা নেই।’ তিনি জানান, আর্থিক বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেখাশোনা করায় বেতন-ভাতাদি সময় মতোই পাওয়া যাচ্ছে। এরপরও কিছু সমস্যা থেকেই যায়।

তিনি জানান, কিছুদিন আগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অসুস্থ হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। শিগগির চেয়ারম্যান ও সচিবের পদ পূরণ করা হলে শিক্ষা বোর্ডের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, জোড়াতালি দিয়েই শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রম চলছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান বলেন, ‘একা তিন পদের দায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টকর। চেয়ারম্যান ও সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকায় আমাকে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখতে হচ্ছে ও সই করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। এতে আমি হিমশিম খাচ্ছি।’

আপনার মতামত লিখুন :