যে বিষয়গুলো মেনে চলতে পারলে চাকরিজীবনে সফলতা পাবেন খুব সহজে
স্টাফ রিপোর্টারঃ>>>
বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর দেখা পেলেন চাকরি নামের সোনার হরিণের। আপনাকে অনেক অভিনন্দন। কি ভাবছেন, আসল কাজটাই তো সারা। তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন! নতুন প্রতিষ্ঠানে প্রথম কয়েক মাস কিন্তু আপনার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অফিস আপনার ব্যাপারে একটা প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যায়, যার ওপর ভিত্তি করে আপনার ভবিষ্যৎ উন্নতি ও সফলতা। আর তাই নতুন চাকরি পাওয়ার পর কিছু ব্যাপারে খুব মনোযোগী হওয়া জরুরি।
নতুন কর্মক্ষেত্রে আপনি শুধু কাজ জানলেই হবে না, আচরণেও সংযত ও কুশলী হওয়া জরুরি সবার সাথে। থাকতে হবে সময়ানুবর্তিতা আর নিষ্ঠা। আচরণে যেমন ঔদ্ধত্য থাকা যাবে না, তেমনি নিজেকে লুকিয়ে রাখাও একধরনের অযোগ্যতা। প্রত্যেকেই ভুল করে, আর কর্মক্ষেত্রে নতুন কর্মীদের ভুল করাই স্বাভাবিক এক টি ব্যাপার। এসব ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ভুল স্বীকার না করার ভুল করা যাবে না। নতুন চাকরিতে এমন অনেক ব্যাপার আছে, যা মেনে চললে সুগম হবে আগামীর পথচলা। আসুন জেনে নিই এ সম্পর্কে—
মানিয়ে নেওয়া
নতুন চাকরিজীবীদের জন্য কর্মক্ষেত্র একধরনের চ্যালেঞ্জ। ‘অফিস’—ব্যাপারটাই তো তাঁদের জন্য এক টি নতুন অভিজ্ঞতা! এ কারণে অনেকেরই মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব মানিয়ে নিতে পারাটাও একধরনের যোগ্যতা ও বটে। অফিস চায় যত দ্রুত সম্ভব আপনি তাদের ‘অংশ’ হয়ে উঠুন। সেই ‘অংশ’ হয়ে ওঠার পথে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের মজাসুলভ টিপ্পনীকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটি অফিসেরই ভেতরকার কিছু অনানুষ্ঠানিক আচরণবিধি রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে একজন নতুন কর্মী নিজেকে মানিয়ে নেন। সহকর্মীদের মজা কিংবা টিপ্পনীকে সেই আচরণবিধির অংশ হিসেবে দেখুন।
সময়ানুবর্তিতা
চাকরি জীবনে সময়ানুবর্তিতার কোন বিকল্প নেই। শুরু থেকেই সঠিক সময়ে অফিসে আসার অভ্যাস তৈরি করুন। সেটা হতে পারে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ-দশ মিনিট আগে। একান্ত বাধ্য না হলে দেরি না করাই ভালো। কোনোভাবে দেরি হয়ে গেলে সেটা আপনার ‘বস’কে জানানোও অফিস-আচরণের আওতাভুক্ত। মনে রাখবেন, মাঝেমধ্যে দেরি হওয়াটা অপরাধ নয়, যেটা আপনার ‘বস’ নিজেও বুঝতে পারবেন। কিন্তু অফিসে যেতে প্রায় প্রতিদিনই দেরি করলে, স্বয়ং ‘বস’ই আপনার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন আস্তে আস্তে। তখন কোনো অজুহাতই কাজে আসবে না আর। আর হ্যাঁ, অফিসে সঠিক সময়ে যাওয়া যেমন জরুরি, তেমনি সঠিক সময়ে বেরিয়ে আসাও একধরনের ‘স্মার্টনেস’। দেরিতে অফিস ত্যাগ করা একধরনের ব্যক্তিত্বের দুর্বলতাও বটে।
দক্ষতা বাড়ান
চাকরির শুরুতে আপনি সব কাজ পারবেন না, এটা কিন্তু অফিস ও জানে। আর শিক্ষানবিশ হলে তো কথাই নেই, কর্তৃপক্ষের শ্যেন দৃষ্টি থাকবে আপনার ওপর। এ কারণে চাকরিতে যোগদানের পর যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাজ বুঝে নিন এবং সেসব কাজ সম্পাদনে নিজের দক্ষতা বাড়ান। মনে রাখবেন, সব কাজ আপনি পারবেন না, এটা অফিস জানে বলেই দেখতে চায়, কত দ্রুত আপনি নিজের দক্ষতা বাড়াচ্ছেন। নিজেকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেঁধে না রেখে বাড়তি দায়িত্ব নিতে শিখুন। এতে আপনার দক্ষতা বাড়বে বই কমবে না। দক্ষতা কম বলে কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, কেউ সেভাবে দাম দিচ্ছে না—এসব নিয়ে একদম ভেঙে পড়বেন না। দক্ষতা বাড়াতে থাকুন, স্বীকৃতি কিংবা সাফল্য আপনাই ধরা দেবে আপনার নিকট।
ভালো সম্পর্ক গড়া
অফিস মানেই ‘টিমওয়ার্ক’। তাই কোনো কাজ সফলতার সঙ্গে শেষ করতে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা জরুরি। এখানে ‘ভালো সম্পর্ক’ বলতে চাটুকারিতা কিংবা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়; এটা আসলে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক। মনে রাখবেন, সহকর্মীদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক থাকলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় অফিস। কেননা, তখন যেকোনো কাজই নিখুঁত ও সফলভাবে শেষ করা যায়। এ কারণে একজন নতুন কর্মী হিসেবে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়তে নিজের ভেতরটা উন্মোচন করুন। কেননা, সুসম্পর্ক গড়তে অন্যদের আগ্রহ না থাকলে নতুন কর্মীকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরে এসব ক্ষেত্রে আপনি অন্তত দায়মুক্ত থাকতে পারবেন। কেউ বলতে পারবে না, অফিসের ওই নতুন ছেলে কিংবা মেয়েটা একেবারেই আত্মকেন্দ্রিক।
সমস্যা নয়, সমাধান খুঁজুন
কর্মক্ষেত্রে একজন নতুন কর্মীর কাজের আগ্রহটা সবাই দেখতে চায়। শুধুই রুটিন মাফিক কাজ করে যাওয়া ঠিক নয়। তার মানে আবার এটাও নয় যে বেশি বেশি কাজ করবেন। নতুন কর্মী নিয়োগের পর অফিস সবার আগে সেই কর্মীর আগ্রহের জায়গাটা নিশ্চিত হতে চায়। এতে অফিসের যেমন কাজের সুবিধা, তেমনি ওই কর্মীরও সুবিধা হয় কাজের ক্ষেত্রে। এ কারণে নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে থেকেই নানা রকম কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ান। কখনোই সমস্যার ফিরিস্তি দেবেন না। অফিস সমস্যা সমাধানেই অভ্যস্ত, এ কারণে কর্মীদের কাছ থেকে সমস্যা নয়, অফিস সব সময় সমাধান চায়। বসের কাছে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে—এটা কখনোই ভাববেন না। চাকরির শুরুতেই অনেকেরই প্রবণতা থাকে বসের কাছে নানা রকম সমস্যা পেশ করা। কিন্তু বস তো আপনার কাছে সমস্যা নয়, সমাধান চান? তা ছাড়া সব সময় শুধু সমস্যার কথা শুনতে কারওই ভালো লাগার কথা নয়। অতএব নতুন কর্মী হিসেবে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করুন, সম্ভাব্য সমাধান থাকলে সেটা বসকে বলুন। ঠিক হোক বা না হোক, দেখবেন বস খুশি হবেন। আর বস খুশি মানে তো অফিসও খুশি
শেষ কথা
এই যুগে চাকরি পাওয়াটাই যেখানে যোগ্যতার পরিচায়ক, সেখানে নতুন কর্মী হিসেবে কখনো আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভুগবেন না। মনে রাখবেন, অফিসের বিধিনিষেধ পালনে সৎ থাকাটা খুব বড় ধরনের যোগ্যতা। ধৈর্য ধারণও জরুরি। কেননা, ধৈর্যের ফল সব সময়ই মধুর। চাকরির পাশাপাশি নিয়মিত পড়ালেখা করুন। এটা আপনার অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেবে। শেষ কথা হলো, সীমালঙ্ঘন না করে গণ্ডির মধ্যে থেকেই নিজেকে বিকশিত করুন। বাকিটা অফিসের ওপর ছেড়ে দিন।



