করোনা আর দশটা রোগের ন্যায় একটা রোগ
আক্রান্ত কাউকে সামাজিক ভাবে অসম্মান না করি
অনেক কষ্ট থেকে আজ লিখতে বসলাম, আমি একজন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ, আর ধর্মিয় বিশ্বাস মতে মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষেরই কর্মের ফল।
আজ কয়েকদিন আমাদের এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি অনেকেই স্টাটাস দিচ্ছেন, যারা প্রবাস থেকে এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিজ গ্রামে আসবে তাদের গ্রামে ডুকতে দেয়া হবেনা।
আজ করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে পৃথিবী জুড়ে লম্বা লকডাউনে পড়ে বাড়ছে চাকুরি চুতি, ব্যবসায় পূজি হারাচ্ছে, মধ্যম ও ছোট ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ লকডাউনের কবলে পড়ে তাদের পূঁজি খোয়াচ্ছে। কোন কোন ব্যক্তি, হালকা – ভারী, বড়- মাঝারি- ছোট ব্যবসা/শিল্প মালিক ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের শ্রমের হাত বেকার হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা আমাদের একার নয়। এটি গ্লোবাল সমস্যা। এটি ভাবার কোন কারণ নেই এই ভাইরাস রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে। আপনি কি মনে করছেন আজ লকডাউন উঠে গেলে কাল পৃথিবী অবার আগের মত চলতে আরাম্ব করবে? বিশেষজ্ঞদের ভাবনামতে করোনা ভাইরাস আরো অন্তত ২-৩ বছর প্রভাব বিস্তার করে থাকবে, আবার কারো মতে এই ভাইরাস এইসআইভি’র মত এই পৃথিবী থেকে কোন দিন নির্মূল হবেনা। তবেকি, কর্মের সন্ধানে শেকড় থেকে দুরে আসা মানুষগুলিকে এই ২-৩ বছর বা সারা জীবন তার নিজ গৃহে ফিরতে দেয়া হবে না? যেই প্রবাসীদের ঘামে আমাদের অর্থনীতির চাকা দৌড়চ্ছিল তাদের বুকে টেনে নিবোনা? বুঝতে হবে পৃথিবী জুড়ে মানুষ দ্রুত ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে। আজ আমরা যদি একে অপরের পাসে না দাড়াই, তবে আমরা সবাই বিপদে পড়বো, ফলে সৃষ্টি হবে সামাজিক বিপর্যয়।
হাদিস মতে “রোগ কখনো সংক্রমিত হয়না”। করোনাকে ভয় নয়। করোনা আক্রান্তদের সামাজিক ভাবে হেয় পতিপন্ন নয়। করোনা মৃত ব্যক্তির দাফনে ধর্মিয় মূল্যবোধের বজায় কাখবো।
কোন নিশ্চয়তা নেই, আমরা যারা বর্তমানে সুস্থভাবে বেচে আছি তাদের করোনা আক্রমণ করবে না। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও মোকাবিলা করেছে প্লেগ, কলেরা, বসন্ত, ম্যলেরিয়া স্পেনিস-ফ্লু’র মত মহামারি। করোনা পৃথিবীর জন্য একটি নতুন রোগ। এটি এখনো কেবল একটি কার্যকর ঔষধ আবিষ্কারের অপেক্ষায়। তাও হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আজ প্রবাসে থাকা, শহরে বা গ্রামে থাকা অর্থনীতির কারিগররা চরম ভাবে অভাবগ্রস্থ ও ঋণের রোলারে পৃষ্ঠ হচ্ছে। কর্মহীন পৃথিবীতে আজ আমরা সবাই বড্ড অসহায়। আজ একের প্রতি অন্যের করুনা নয়, আজ সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমাজিক অসম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে এই মহামারী কাল পাড়ি দিতে হবে। পৃথিবী একদিন করোনা মুক্ত হবে। সেদিন আমরা প্রবেশ করবো এক ভিন্ন পৃথিবীতে। পরিবর্তন আসবে আমাদের চলাফেরায়, উঠা বসায়, শিক্ষা ও কর্ম পদ্ধতিতে, পরিবর্তন আসবে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজতত্ব, আসবে পরিবর্তিত আচার অনুষ্ঠান ও সামাজিক কর্ম কান্ড। আমাদের সামনে দাড়িয়ে এক খুদা ও বেকারত্বের পৃথিবী। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের একদিন ক্ষমা করবেন। সেদিন এই কর্মদক্ষ হাতগুলো আবার আমাদের আলোর পথ দেখাবে।
যতদিন করোনার কার্যকর ঔষধ আবিষ্কার না হচ্ছে ততদিন আমরা সবাই করোনার শিষ্টাচার মেনে চলবো। আমরা প্রত্যেকে আমাদের প্রতিবেশী, তত্বীয়, বন্ধু বান্ধব ও প্রিয়জনকে শিষ্টাচার সম্পর্কে সচেতন করবো, সবাই আমরা সবার তরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। আমাদে প্রিয়জন, তত্বীয়, প্রতিবেশী কেউ অন্যত্র থেকে আসলে তাকে ধিক্কার নয় শিষ্টাচার মানতে প্রয়োজনিয় সাহায্য করি। আমরা সবাই ভাই-ভাই, তাই সমাজ থেকে কাউকে বহিস্কার নয়, আসুন কাধেকাধ মিলিয়ে এই দুর্যোগের সময় পাড়িদেই। করোনা আর দশটা রোগের ন্যায় একটা রোগ। আক্রান্ত কাউকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন না করি। নয়তো, আল্লাহ না করুক কাল আমাদের কাউকেনা কাউকে সামাজিক ভাবে এই হেয় প্রতিপন্নতার মুখোমুখি হতে হয়!!